“গায়রাত”(আরবি: غيرَة) শব্দের অর্থ হল ঈর্ষা, স্নেহপ্রসূত হিংসা বা সম্মানের রক্ষাকল্পে হওয়া প্রতিক্রিয়া। ইসলামি পরিভাষায় গায়রাত এমন একটি গুণ, যা পরিবার, সমাজ বা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে অনৈতিকতা, অন্যায় ও হারাম কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এটি মানুষের সম্মান, আত্মসম্মানবোধ ও পবিত্রতা রক্ষার একটি আবেগপ্রসূত অনুভূতি। কুরআন মাজিদে সরাসরি “গায়রাত” শব্দ ব্যবহৃত না হলেও এর অর্থ ও প্রভাব বোঝানোর জন্য একাধিক আয়াত এসেছে।
কোরআনে আল্লাহ গায়রাত রক্ষার জন্য বলেছেন,
“আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না; নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা আল-ইসরা: ৩২)
এই আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা অশ্লীল কাজ, হারাম সম্পর্ক এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের রক্ষা করবে। গায়রাত হলো সেই আত্মিক অনুভূতি যা একজন মুমিনকে পাপাচার থেকে বিরত রাখে এবং নিজের পরিবার বা সমাজে পবিত্রতা বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করে।
এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা অন্য জায়গায় বলেছেন,
“আর মুমিন নারীদেরকে বলো তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।…” (সূরা আন-নূর: ৩১)
এই আয়াতে নারীদের পর্দা এবং লজ্জাশীলতা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি গায়রাতের একটি বহিঃপ্রকাশ, যেখানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা করা হয়।
চলুন হাদিসের আলোকে গায়রত কে ব্যাখ্যা করা যাক।
হাদিস শরিফে গায়রাতের গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়রাতকে ঈমানের একটি অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“আল্লাহরও গায়রাত রয়েছে, আর একজন মুমিনেরও গায়রাত রয়েছে। আল্লাহর গায়রাত হলো, যখন বান্দা এমন কিছু করে যা আল্লাহ হারাম করেছেন।”(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৭৪১৬)
এই হাদিসে বোঝানো হয়েছে যে আল্লাহ নিজ বান্দাদের পাপাচার, ব্যভিচার ও অন্যায় কাজে অপ্রসন্ন হন। তাই একজন মুমিনকেও তার পরিবার, সমাজ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার্থে গায়রাত প্রদর্শন করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন:
“গায়রাতওয়ালা ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেন, তবে যারা যথার্থ গায়রাত প্রদর্শন করে।”(সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং: ২৬৫৯)
এখানে গায়রাতকে ইতিবাচক মানসিক গুণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, তবে তা যেন অহেতুক সন্দেহ বা বাড়াবাড়িতে রূপ না নেয়।গায়রাতের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিগত পবিত্রতা, পারিবারিক মর্যাদা ও সমাজে শালীনতা বজায় রাখা,আল্লাহর অসন্তুষ্টি এড়ানো এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের রক্ষা। গায়রাত অত্যন্ত সুন্দর গুণ, তবে তা ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। |
গায়রাত হলো একটি মুমিনের জন্য ঈমানের অঙ্গ এবং আত্মমর্যাদার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এটি ব্যক্তিগত জীবনকে পবিত্র রাখে এবং সমাজে শালীনতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে গায়রাত চর্চা করার ক্ষেত্রে চরমপন্থা বা অহেতুক সন্দেহ পরিহার করা জরুরি। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয়েই গায়রাতকে প্রশংসনীয় গুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা একজন প্রকৃত মুসলিমের পরিচয় বহন করে। তাই আমাদের গায়রাত ওয়ালা মুসলিম হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
আরও পড়ুনঃ
১। থার্টি ফার্স্ট নাইট: ইতিহাসের ধারায় উৎসবের বিবর্তন
২। প্রতিযোগিতা (কী এবং কেন?)