থার্টি ফার্স্ট নাইট বা নতুন বছরের আগমনী রাত বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। আতশবাজি, পার্টি, এবং নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই রাতকে উদযাপন করা হয়। তবে একজন মুসলিম হিসেবে এই উদযাপন কতটা ইসলামসম্মত, তা নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি। আসুন, এক নজরে দেখি এই রাতে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হয় এবং ইসলামের আলোকে আমাদের করণীয় কী হতে পারে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে কী করা হয়?
আতশবাজি ও আলোকসজ্জা: রাত ১২টা বাজতেই আকাশজুড়ে আতশবাজির ঝলকানি এবং শহরজুড়ে আলোকসজ্জা দেখা যায়।
পার্টি ও কনসার্ট: বিভিন্ন ক্লাব, রেস্টুরেন্ট, এমনকি রাস্তায়ও নাচ-গানের অনুষ্ঠান এবং কনসার্টের আয়োজন করা হয়।
মদ্যপান ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড: মদ্যপান, উচ্চ শব্দে গান-বাজনা এবং বিভিন্ন অশালীন কর্মকাণ্ড এই রাতে ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে।
নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা: ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর চেষ্টা করা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট
ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এটি মানুষের সকল ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান করে। থার্টি ফার্স্ট নাইটের অনেক কর্মকাণ্ড ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অপচয় নিষিদ্ধ: ইসলাম সম্পদ এবং সময়ের অপচয়কে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। আতশবাজি, আলোকসজ্জা, এবং বিলাসবহুল পার্টি এই অপচয়ের অন্যতম উদাহরণ।
অনৈতিকতা হারাম: মদ্যপান, উচ্চশব্দে গান-বাজনা এবং অশালীন আচরণ ইসলামের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিদেশি সংস্কৃতির অনুসরণ: থার্টি ফার্স্ট নাইট পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি অংশ। ইসলামি স্কলাররা মনে করেন, মুসলমানদের উচিত নিজস্ব ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বজায় রাখা।
কুরআন শরীফে বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।” (সুরা আল-ইমরান, আয়াত 19)
আল্লাহর স্মরণ থেকে বিচ্যুতি: এই রাতে অধিকাংশ মানুষ দুনিয়াবি আনন্দে মগ্ন থাকে, যা তাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
মুসলিমদের করণীয় কী?
ইবাদত করুন: এই রাতে বেশি বেশি নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমে নতুন বছরের সূচনা করুন।
লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: নতুন বছরের জন্য ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের উদ্দেশ্য ঠিক করুন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান: পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার মাধ্যমে রাতটি উদযাপন করুন।
অন্যদের সচেতন করুন: থার্টি ফার্স্ট নাইটের অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে সচেতন করুন।
সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ: দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
বিশেষ বিবেচ্য বিষয়
ইসলামি উৎসব: ইসলামে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, জুমা ইত্যাদি উৎসব পালনের বিধান রয়েছে। মুসলমানদের উচিত এই উৎসবগুলোকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া।
সামাজিক প্রভাব: থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সমাজে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: মাদকাসক্তি বৃদ্ধি, অপরাধ বৃদ্ধি, এবং পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি।
বিকল্প উদযাপন: মুসলমানরা ইসলামি শিক্ষার আলোকে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে। যেমন: দরিদ্রদের খাবার বিতরণ, মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করা, ইসলামি বই পড়া ইত্যাদি।
উপসংহার
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন একটি ব্যক্তিগত পছন্দ হলেও, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত ইসলামি শিক্ষার আলোকে এই বিষয়টি বিবেচনা করা। আমাদের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী জীবন যাপন করা।
আমরা সবাই মিলে ইসলামি মূল্যবোধকে সমাজে প্রচার করে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর সমাজ গড়তে পারি।
লিখেছেন
মোঃ রিয়াদ হাসান
কারমাইকেল কলেজ রংপুর
আরও পড়ুনঃ
১। থার্টি ফার্স্ট নাইট: ইতিহাসের ধারায় উৎসবের বিবর্তন
২। গায়রাত কি ? মুসলিমদের জন্য গায়রাত জরুরী কেন?
৩। প্রতিযোগিতা (কী এবং কেন?)