মেজর শরিফুল হক ডালিমের লেখা “আমি মেজর ডালিম বলছি” বইটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। বইটিতে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর পরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন। নিচে বইটির কিছু উল্লেখযোগ্য ভালো দিক আলোচনা করা হলো:
“আমি মেজর ডালিম বলছি”
১. প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
বইটির প্রধান আকর্ষণ হলো লেখকের নিজ অভিজ্ঞতা ও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বর্ণিত ঘটনাগুলো। মেজর ডালিম সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ফলে বইটি পাঠকদের একটি প্রত্যক্ষ ও জীবন্ত চিত্র তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
২. ঐতিহাসিক দলিল
এই বইটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের উপর আলোকপাত করে। ১৯৭৫ সালের ঘটনাবলি এবং পরবর্তী সময়ের সামরিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য এটি একটি তথ্যসমৃদ্ধ উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
৩. বিতর্কিত বিষয়ে আলোচনার সুযোগ
বইটিতে ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনের বিভিন্ন চক্রান্ত ও কারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পেছনের সম্ভাব্য কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা, এবং দেশের ভেতরে ও বাইরে কীভাবে ঘটনাগুলো প্রভাব ফেলেছিল—এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
৪. ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ
লেখক নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনার বিশ্লেষণ করেছেন, যা সাধারণ ইতিহাসের বইগুলোর তুলনায় ব্যক্তিগত অনুভূতি ও মতামতকে বেশি জায়গা দিয়েছে। এটি পাঠকদের ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো মূল্যায়নের সুযোগ করে দেয়।
সমালোচনামূলক দিক
যদিও “আমি মেজর ডালিম বলছি” বইটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল, তবে এটি কিছু সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে।
১. পক্ষপাতিত্ব
লেখক বইটিতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও মতামতের ভিত্তিতে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক মনে হতে পারে। এতে তিনি নিজের ভূমিকার স্বপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন।
আরও পড়ুনঃ মনীষীদের ৫০ টি সেরা বাণী/উক্তি
২. সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা
বইয়ের সব তথ্য একাডেমিক গবেষণার জন্য যাচাইযোগ্য নয়। এতে উল্লিখিত অনেক বিষয় বিতর্কিত এবং বিভিন্ন ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা তথ্যগুলোর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
৩. একপক্ষীয় দৃষ্টিভঙ্গি
ঘটনাগুলোর অন্যান্য অংশগ্রহণকারীর দৃষ্টিভঙ্গি বা বিপরীত মতামত বইটিতে খুব কমই পাওয়া যায়, যা পাঠকের জন্য একটি সামগ্রিক চিত্র গঠনে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে।
উপসংহার
“আমি মেজর ডালিম বলছি” বইটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে আলোচনায় এনেছে। এটি পড়ার সময় পাঠকদের সমকালীন অন্যান্য বই, প্রবন্ধ, এবং নিরপেক্ষ গবেষণাগুলো থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। বইটি পড়ে কেমন লাগলো ও কি কি জানলেন তা আমাদের জানাতে পারেন write@protizogi.com এ