দুনিয়ার কষ্ট ও বিপদ: জান্নাতের পথে আল্লাহর রহমত
মেটা বর্ণনা:
এ পৃথিবী কষ্টে ভরা, এবং আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে তাতে আক্রান্ত। কিন্তু এই কষ্টের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? ইসলাম কি এই বিপদকে শুধু দুঃখ হিসেবে দেখে, না আবার এর ভেতর একটি সোনালী সুযোগও লুকিয়ে থাকে? দুঃখের প্রতিটি মুহূর্ত কি পাপ মাপনের এক অদেখা উপায়, যা আমাদের জান্নাতের পথে নিয়ে যায়?
👉 আরও পড়ুনঃ মৃত্যু নিয়ে উক্তি-মৃত্যু সম্পর্কিত ৪০ টি বাণী
প্রারম্ভিক ভাবনা: কষ্টের কবিতা, আল্লাহর রহমতের সুর
যখন জীবন অন্ধকারে ডুবোতে থাকে, তখন আল্লাহ যেন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, এই অন্ধকারেই এক সূর্যের দীপ্তি ছড়িয়ে আছে। যখন দুঃখের মেঘ আছড়ে পড়ে, তখন হালকা এক মৃদু হাওয়া মনে করিয়ে দেয়, একদিন সেই মেঘ সরে যাবে, এবং আকাশ আবার খোলামেলা হবে। যেন প্রতিটি কষ্ট, প্রতিটি ব্যথা, আমাদের জান্নাতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক সরল পথ।
এমনকি ইসলামেও এই কষ্টের ভেতর আল্লাহর রহমতের মর্ম নিহিত রয়েছে। প্রতিটি আঘাতের পর, যেমন গাছের শাখায় নতুন পাতা আসে, তেমনি দুঃখের পর আসে আত্মিক শান্তি এবং আধ্যাত্মিক মুক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে কষ্ট এক গভীর মন্ত্রের মতো, যা মানুষের অন্তরে অবিরাম প্রভাব ফেলে।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ”
(সুরা আল-বাকারা: ১৫৫)
অর্থ:
“আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পত্তির ক্ষতি, প্রাণের ক্ষতি এবং ফলের ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। আর যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদের সুসংবাদ দাও।”
এ আয়াত যেন স্মরণ করিয়ে দেয়, কষ্টের সময় আসলেই আমাদের জন্য এক নতুন পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা শুদ্ধ হতে শিখি, এবং পরিশুদ্ধির পথটুকু পেয়ে যাই।
কষ্ট ও বিপদ: পাপ মোচন এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির আলোকমালা
আমরা কি কখনো ভাবি, দুঃখের এই অগণিত অশ্রু এবং ব্যথার মধ্যে কী সুন্দর কোনো প্রশান্তি লুকিয়ে থাকতে পারে? আমাদের মনে যখন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, তখন কি সত্যিই কষ্টের মধ্যে শান্তি নিহিত রয়েছে? ইসলামের মৌলিক শিক্ষা বলছে, প্রতিটি কষ্ট যেন এক অনন্ত সুযোগ, যা আমাদের পাপ মোচনের দরজা খুলে দেয়।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“مَا يُصِيبُ الْمُؤْمِنَ مِنْ حَزَنٍ وَلَا غَمٍّ وَلَا قَلَقٍ وَلَا أَذًى حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ”
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৬৪১)
অর্থ:
“মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে ক্লান্তি, রোগ, উদ্বেগ, দুঃখ, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করেন।”
👉 আরও পড়ুনঃ রজব মাসের গুরুত্ব, ফজিলত, আমল ও দোয়া
এই হাদিসের মাধ্যমে যে বার্তা আসে তা হলো—প্রতিটি কষ্ট, স্নায়বিক আঘাত কিংবা দুর্ভাগ্য, আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ তত্ত্ব। আমরা ভাবি, আমাদের জীবনের সকল দুঃখ যেন তিক্ত এক অভিজ্ঞতা, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এটি আমাদের গুনাহ মুছতে সহায়তা করে। প্রতিটি ক্ষণ ক্ষণ কষ্ট, আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, যেন সেই কষ্ট একদিন জান্নাতের ফসল হয়ে ফিরে আসে।
কষ্টের পরবর্তী অধ্যায়: শান্তির দিকে এগিয়ে চলা
একটি প্রবাদ আছে—”যখন কষ্ট আসে, তখন মনে রেখো, সে তোমার জন্য এক বিশেষ মেসেজ নিয়ে এসেছে।” ইসলামে কষ্টকে শুধুমাত্র অশুভ বা বিপদ হিসেবে না দেখে, বরং সেটিকে পরবর্তী এক অনন্ত আনন্দের সংকেত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জান্নাতের দিকে চলার পথ যত কঠিন, ততই তার সৌন্দর্য বর্ণনার বাইরে।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“إِمَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومًۭا مَّدۡحُورًۭا (١٨) وَمَنۡ أَرَادَ ٱلۡأٓخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعۡيَهَا وَهُوَ مُؤۡمِنٌۭ فَأُوۡلَـٰٓٮِٕكَ كَانَ سَعۡيُهُم مَّشۡكُورًۭا (١٩)”
(সুরা আল-ইসরা, আয়াত ১৯)
“যে লোক পার্থিব জীবন কামনা করে, আমি তৎক্ষণাৎ তার জন্য যা ইচ্ছা করি তা দিই; কিন্তু পরিণামে আমি তাকে জাহান্নাম দেব, যেখানে সে লাঞ্ছিত ও বিতাড়িত হবে। আর যারা পরকাল চায় এবং সৎ প্রচেষ্টা করে, এবং তারা মুমিন—তাদের প্রচেষ্টা গ্রহণযোগ্য।
এই আয়াতে যেমন বলা হয়েছে, জান্নাতের প্রতিশ্রুতি শুধু সৎকর্মের ফল নয়, বরং সেসব দুঃখের পরিণতিও যা একজন মুমিন জীবনে সহ্য করে। জান্নাতের যে শান্তি, তা পৃথিবীর জীবনের সব কষ্টের সমান প্রতিশ্রুতি।
উপসংহার: কষ্টের ক্ষণে জান্নাতের সুর
সত্যি, কষ্টের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হওয়া উচিত। যখন বিপদ আসে, তখন তা শুধু জীবনকে কঠিন করে না, বরং এক নতুন শক্তি ও বিশ্বাস এনে দেয়। সেই বিশ্বাসে ধীরে ধীরে তৈরি হয় আত্মিক শক্তি, যা আমাদের পরকালে জান্নাতের পথে ধাবিত করে।
এবং একদিন, যখন আপনি জান্নাতের সুঘ্রাণে ভরপুর হয়ে যাবেন, তখন আপনি বলতে পারবেন—
“হে দুঃখ, হে কষ্ট, ধন্যবাদ তোমায়—তুমিই তো আমার জান্নাতের সওয়ারি।”
লিখেছেন
মোঃ রিয়াদ হাসান
কারমাইকেল কলেজ রংপুর