ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day), ভালোবাসা ও ভালোবাসার মানুষের প্রতি সমর্পণ ও শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য একটি বিশেষ দিন, যা প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি তারিখে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। যদিও এই দিনটি আধুনিককালে রোমান্টিক ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে পরিচিত, এর ইতিহাস গভীর এবং বহুস্তরবিশিষ্ট।
ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day)-এর প্রাচীন উৎস
ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day)-এর উৎস নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এই দিনের সঙ্গে প্রাচীন রোমান উৎসব ‘লুপারকালিয়া (Lupercalia)’র যোগসূত্র পাওয়া যায়। লুপারকালিয়া (Lupercalia) ছিল একটি উর্বরতার উৎসব, যা ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উদযাপিত হতো। উৎসবের সময় ছাগল ও কুকুর বলি দেওয়া হতো এবং বলির চামড়া দিয়ে মহিলাদের গায়ে আঘাত করা হতো, যা উর্বরতা বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে দেখা হতো।
লুপারকালিয়া (Lupercalia) উৎসব ফাউনাস (Faunus) দেবতার সম্মানে পালিত হতো, যিনি কৃষি ও উর্বরতার দেবতা ছিলেন। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যুগল তৈরি করার জন্য নামের লটারি খেলার প্রথাও ছিল।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের গল্প
ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day) সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ইতিহাসে তিনজন ভ্যালেন্টাইনের উল্লেখ পাওয়া যায়, যাদের সবাই ১৪ ফেব্রুয়ারির সঙ্গে সম্পর্কিত আছেন। সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি- ৩য় শতাব্দীতে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস যুবকদের বিবাহ নিষিদ্ধ করেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন (Saint Valentine) গোপনে বিবাহ করাতেন এবং এ জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আরেকটি গল্প অনুসারে, তিনি কারাগারে বন্দি অবস্থায় জেলের মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন এবং মৃত্যুর আগে তাকে “Your Valentine” লিখে একটি চিঠি দেন।
মধ্যযুগের ভালোবাসার দিবস
মধ্যযুগে কবি জিওফ্রে চসার (Geoffrey Chaucer) ভালোবাসার দিবসের ধারণা জনপ্রিয় করেন। তার “Parlement of Foules (Parliament of Fowls)” কবিতায় পাখিদের জোড়া বাঁধার দিন হিসেবে ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day) উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে ইউরোপজুড়ে ভালোবাসার বার্তা ও কবিতা বিনিময়ের প্রচলন শুরু হয়।
ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day) কার্ড ও উপহার বিনিময়
ষোড়শ শতাব্দী থেকে হাতে লেখা ভালোবাসার চিঠি জনপ্রিয় ছিল। ১৮৪০-এর দশকে এস্টার হাওল্যান্ড (Esther Howland) প্রথম বাণিজ্যিক শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে ফুল, চকোলেট, পারফিউম, এবং গহনা উপহার দেওয়া হয়।
ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day)-এর আধুনিক রূপ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের কারণে এখন এই দিন আরও জনপ্রিয়। বিভিন্ন দেশে নিজস্ব রীতি অনুযায়ী উদযাপন হয়। জাপানে (Japan) নারীরা পুরুষদের চকোলেট দেন এবং এক মাস পরে হোয়াইট ডে (White Day) পালিত হয়। ব্রাজিলে (Brazil) জুন মাসে “ডিয়া দোস নামorados (Dia dos Namorados)” পালিত হয়।
সমালোচনা ও বিতর্ক
অনেকে মনে করেন যে ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day) ভালোবাসার চেয়ে বাণিজ্যিকীকরণ বেশি করছে। কিছু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এই উদযাপনকে পশ্চিমা প্রভাব হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে। ভারতে কিছু সংগঠন প্রকাশ্য ভালোবাসা প্রদর্শনের বিরোধিতা করে।
আরও পড়ুনঃ বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব: একটি গৌরবময় ইতিহাস ও উত্তরাধিকার
বিকল্প উদযাপন
দক্ষিণ কোরিয়ায় (South Korea) প্রতি মাসের ১৪ তারিখে সম্পর্ক উদযাপন করা হয়। চীনে (China) “কিউকি ফেস্টিভ্যাল (Qixi Festival)” পালিত হয়। এসব উৎসব ভিন্ন হলেও ভালোবাসা উদযাপনের মর্ম সর্বত্রই এক।
উপসংহার
ভ্যালেন্টাইনস ডে (Valentine’s Day)-এর ইতিহাস প্রেম এবং সংস্কৃতির একটি মিশ্রণ। এর শিকড় প্রাচীন রোমান উৎসবে প্রোথিত, আধুনিককালে এটি তথাকথিত ভালোবাসার প্রতীক। উদযাপনের গুরুত্ব সর্বদাই রয়ে গেছে, যা মানব সম্পর্কের গভীরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।